পবিত্র কোরআনের ৪২তম সূরা ‘শুরা’। অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র নগরী মক্কায়। এতে রয়েছে ৫টি রুকু ও ৫৩ আয়াত। ‘শুরা’ শব্দের অর্থ ‘পরামর্শ’। সূরাটির ৩৮ নম্বর আয়াতে ‘শুরা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। তা থেকেই এই সূরার নাম। বলা হয়েছে, জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে কঠিন দুর্দশার পর। এই সূরায় বৃষ্টি নিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তার রহমত ছড়িয়ে দেন, তিনি-ই সকল গুণে প্রশংসিত প্রকৃত অভিভাবক। (সূরা শুরা, আয়াত-২৮)
এদিকে বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র দাবদাহ। গরমে অতিষ্ঠ দেশবাসী! এক ফোঁটা বৃষ্টির আশায় সময় পার করছে সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে কয়েক জেলায় হয়েছে বৃষ্টি। তবে বৃষ্টি হবার পরও পরছে গ্রীষ্মের তীব্র গরম। সঠিক সময়ের বৃষ্টি আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত।
তবে একইসাথে অনেক সময় বৃষ্টি আল্লাহর গজব হিসেবেও বর্ষিত হয়। যেমন: পবিত্র কোরআনে মহাণ আলাহ বলেন, ‘আর আমি তাদের ওপর বর্ষণ করেছিলাম ‘বৃষ্টি’। সুতরাং দেখ, অপরাধীদের পরিণতি কিরূপ ছিল।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৮৪) এছাড়াও সূরা হুদের ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেলো, তখন আমি জনপদের ওপরকে নিচে উল্টে দিলাম এবং ক্রমাগত পোড়ামাটির পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করলাম ‘।
বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা বর্ষিত হয় আল্লাহ তাআলার রহমতের ধারা হয়ে। বৃষ্টি হলে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণের শিক্ষাও দিয়েছেন বিশ্বনবী (সা.)। তিনি বৃষ্টিকে খুব ভালোভাবেই উপভোগ করতেন। সাহাবি হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা মহানবীর (সা.) সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন তার কাপড় প্রসারিত করলেন; যাতে পানি তাকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ বৃষ্টি তার মহান রবের কাছ থেকে এই মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম, হাদিস: ৮৯৮)
আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। তিনি এই বলে দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫,১৯৯)।
এছাড়াও আবু দাউদের বর্ণনায় রয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, বৃষ্টির সময় করা দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’ তবে দমকা হওয়া বইতে দেখলে নবীজি (সা.) উদ্বিগ্ন হতেন। বৃষ্টি শুরু হলে তিনি খুশি হয়ে উঠতেন। হজরত আয়িশা (রা.) বলেছেন, আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মতের ওপর কোনো গজব আসে কি না।’ বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, ‘এটি আল্লাহর রহমত।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৬৯)
তাই আশানুরূপ বৃষ্টি না হলে নিরাশ হবার চেয়ে বেশি বেশি মহান রবের কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করাই উত্তম। বলা যায় না, কার দু’হাত তোলা দোয়া আল্লাহ কবুল করেন এবং ওপর থেকে বৃষ্টি নাজিল করেন, সবার জন্য!